আমরা জানি, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, বিদেশী বিনিয়োগের অভাব এবং দেশের ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা কিছুটা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ৭৩০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স আসার খবর আমাদের জন্য অনেকটাই আশার আলো, যেন একটা লটারি জিতলেই যেমন হয়। তবে, এই বিশাল রেমিট্যান্স সম্পর্কিত যে কিছু প্রশ্ন উঠছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কিছুদিন আগে একটি আলোচনায় বলেছেন যে, ৭৩০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স আনার বিষয়টি আইনকানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে হয়েছে। যদিও তিনি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেননি কোথায় অনিয়ম হয়েছে, তবুও এর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন উত্থিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য দেশের আইন অনুযায়ী এটি হওয়া উচিত ছিল, যাতে প্রবাসীরা আয়করের ঊর্ধ্বে এই টাকা পাঠাতে পারেন, কিন্তু যদি কিছু অনিয়ম ঘটে থাকে, তাহলে তা তদন্তের আওতায় আসবে।
এখানে প্রধান প্রশ্ন হলো, কীভাবে এত বড় পরিমাণ রেমিট্যান্স একটি একক ব্যক্তি আনার সুযোগ পেলেন? সাধারণত, বৈধ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের উপার্জিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠান এবং সেই টাকা কোনো নির্দিষ্ট আইনগত কাঠামোর মধ্যে চলে আসে। কিন্তু, যদি টাকার উৎস নিয়ে সন্দেহ থাকে, তা হলে কী হতে পারে? যেমন, প্রবাসী যে দেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছেন, সেই দেশে তিনি আয়কর দিয়েছেন কিনা, কিংবা টাকা পাচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ ঘটেছে কিনা, এসব প্রশ্ন উঠতে পারে।
একটি বড় দৃষ্টিভঙ্গি হল, যদি কোনো ব্যক্তি বৈধভাবে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেন এবং সেই অর্থ দেশে আনার জন্য দেশের আইন অনুযায়ী সব নিয়ম পালন করেন, তবে তার উপার্জিত অর্থ পাঠানো বৈধ হতে পারে। কিন্তু যদি সেই টাকা দেশের বাইরে নেওয়া হয়েছিল আগে, তখন হয়তো পাচারের মাধ্যমে আনা হতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা হয়ে যায়।
একটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যখন দেশের বড় কোনো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি বিদেশে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন, সেসময় এই ধরনের অর্থ সংগ্রহ করা ও দেশে ফেরত আনা কিছুটা সমস্যাজনক হতে পারে। কারণ, প্রচলিত নিয়মে, কোনো বড় পরিমাণ অর্থ আনতে হলে, তা নিশ্চিতভাবে দেশে এসে স্বচ্ছতার সাথে ব্যবসায়ীদের আয়করের আওতায় আসবে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। কারণ, তিনি তার মন্তব্যে একটি ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছেন, যেটি ব্যাংকিং প্রাইভেসি এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন উত্থাপন করে। যে ব্যক্তি এত বড় পরিমাণ টাকা দেশে আনার দাবি করছেন, তার কাছে যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তবে সেটা সরাসরি তদন্তের মধ্যে আনা উচিত। তবে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমের ভিত্তি হচ্ছে গ্রাহকের আস্থার প্রতি সম্মান রাখা, তাই কোনোভাবেই কোনো গ্রাহককে হেনস্তা করা উচিত নয়।
অন্যদিকে, যদি ব্যক্তি সত্যিই বৈধভাবে তার আয় থেকে এই টাকাটি দেশে নিয়ে আসেন এবং আয়কর নথিতেও তা দেখান, তবে তার উপর কোনো অভিযোগের ভিত্তি নেই। তবে, এই বিষয়টি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে, কারণ বিদেশে এত বড় পরিমাণ টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা বা অনিয়মের আশঙ্কা সবসময়ই থাকে।
এই ঘটনার পর, ব্যাংকিং সিস্টেমের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়, তবে সঠিকভাবে তদন্ত করা এবং আইন অনুসারে সব কিছু সমাধান করা উচিত। ব্যাংক গ্রাহকদের স্বার্থে, ভবিষ্যতে যেন কোনো ধরনের হেনস্তা বা জল্পনা না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।