শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
Headline
চালের দানার চেয়েও ছোট পেসমেকার তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনে দুইজন নিহত, ৩৫ জন আহত মুঠোফোন বেজে চললেও কোনো জবাব আসছে না: ভবনের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা ঈদুল ফিতরে ঢাকায় গরুর মাংসের বাজার ৩২০ কোটি টাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তিন নেতার সাময়িক অব্যাহতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন চার প্রসিকিউটরের নিয়োগ তামিম ইকবালের শারীরিক অবস্থা ও তার ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে টার্বাইন স্থাপন ‘আওয়ামী লিগ’ নামে দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছেন উজ্জল রায় দেশ নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল
রাজনৈতিক দলের অনুদান গ্রহণ: দুর্নীতির এক রূপ?
/ ৫০ Time View
Update : শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫
রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য, রাজনৈতিক তত্ত্ব কী, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ২০২৪, রাজনৈতিক স্ট্যাটাস, রাজনৈতিক কাঠামো কি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল,

রবার্ট ক্লিটগার্ড (১৯৮৮) দুর্নীতির সংজ্ঞা দিয়েছেন, যা এখনও বহুল প্রচলিত: ‘দুর্নীতি হলো রাষ্ট্রীয় পদের অপব্যবহার, যা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।’ দুর্নীতির বিভিন্ন রূপের মধ্যে ঘুষ, চাঁদাবাজি, কমিশন, রেন্ট-সিকিং, তহবিল আত্মসাৎ, পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি, গোষ্ঠীপ্রীতি এবং পক্ষপাতিত্বসহ আরও বহু ধরনের কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত। বিশেষভাবে রাজনৈতিক অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি রেন্ট-সিকিং তথা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সুবিধা লাভের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

এমনই ধারণা পোষণ করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুশতাক খান, যিনি তাঁর ‘ডিটারমিন্যান্টস অব করাপশন’ বইতে উল্লেখ করেছেন যে, লবিং এবং রাজনৈতিক অনুদানও আসলে রেন্ট-সিকিং আচরণ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, এমনকি সম্মানজনক পুরস্কারের জন্যও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হলো নোবেল পুরস্কারের মতো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি-ভিত্তিক লবিং, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। যে ব্যক্তি এ ধরনের লবিংয়ের আশ্রয় নেয়, তা শুধু তাঁদের পার্সোনাল লাভের জন্য নয়, বরং তারা পুরো সমাজে দুর্নীতির বিস্তার ঘটায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে রাজনীতি, ব্যবসা ও প্রভাব খাটানোর কৌশল একত্রিত হয়েছে। আজকাল এটি জানা যাচ্ছে, যারা বিপুল অর্থসম্পদ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে, তারা রাজনৈতিক আন্দোলন গঠন করতে, আখ্যান পরিবর্তন করতে এবং এমনকি রাষ্ট্রের উচ্চ পদ কুক্ষিগত করতে বিদেশি শক্তির সহায়তা নিয়ে থাকে। বাইরের শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক লবিং, বর্তমানে যেন বিশ্বের ‘ক্ষমতা’ উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ধরনের কৌশল অভিজাত শ্রেণির জন্য একটি শক্তিশালী অস্ত্র। পর্দার আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিশ্বের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হলেও, তারা নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক অনুদান ও অর্থের ব্যাপারে একই ধরনের আলোচনা করছে। সকল দল নিজেদের গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে দাবি করে, অথচ দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায় একই ধরনের পন্থা অবলম্বন করে।

উন্নত দেশগুলো যেমন দুর্নীতি নির্মূলের কথা বললেও, তারা নিজেদের দেশে সেই একই দুর্নীতির প্রভাব পরিলক্ষিত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের রাজনৈতিক প্রচারণার অর্থায়ন করপোরেট অনুদানের মাধ্যমে যে প্রভাব বিস্তার করেছে, তা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। নির্বাচনে বড় করপোরেশন ও শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক অর্থায়ন করে এবং বিপুল প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলশ্রুতিতে, নির্বাচিত নেতারা জনকল্যাণের চেয়ে করপোরেট স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

যেমন, বারাক ওবামা যখন তার প্রচারণায় ওয়াল স্ট্রিটের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখনই তিনি এ ক্ষেত্র থেকে বিশাল আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন। অথচ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পরেও তার প্রশাসন ওয়াল স্ট্রিটকে বেইলআউট করতে বাধ্য হয়েছিল, যা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বিপরীত ছিল।

রাজনৈতিক অনুদান কেবল উদারতার চিহ্ন নয়, এটি একটি কৌশল হিসেবে কাজ করে, যা বিশেষ রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য প্রদান করা হয়। নির্বাচনের বাইরে করপোরেশনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থায়ন করতে থাকে, যাতে ক্ষমতায় গেলে রাজনীতিবিদেরা জনগণের স্বার্থের চেয়ে করপোরেট স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।

যদি কোনো রাজনৈতিক দল করপোরেট অনুদান গ্রহণ করে, তবে বুঝতে হবে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে বৃহৎ ব্যবসায়ী বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের পছন্দসই নীতি প্রণয়ন এবং চুক্তি অর্জনের জন্য প্রভাব বিস্তার করে।

এমনই প্রভাবের উদাহরণ পাওয়া যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে, যিনি নিজেকে জনগণের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করলেও, তিনি বৃহৎ করপোরেশন, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি ও বড় ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অনুদান পেয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, তার প্রশাসন পরিবেশগত বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল এবং করপোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল।

জো বাইডেনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, তাঁর প্রচারণা গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের থেকে বৃহৎ অনুদান পেয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর প্রশাসন এই কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য কমানোর জন্য খুব একটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

করপোরেট অনুদানের এই প্রভাব শুধু প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আগের প্রশাসনগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব ছিল। উদাহরণস্বরূপ, রোনাল্ড রিগ্যানের সময়েও করপোরেট স্বার্থের দিকে পক্ষপাতিত্ব ছিল।

এমনই এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও, যেখানে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে। দীর্ঘদিন ধরে বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, এস আলম গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের শাসনব্যবস্থায় এক ধরনের আধিপত্য বজায় রেখেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করছে।

এখন নতুন রাজনৈতিক দলগুলি কি এ ধরনের চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, নাকি তারা একই পথ অনুসরণ করবে? যদি রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করা যায়, তবে একটি গণতান্ত্রিক দেশেও ধনী অভিজাতদের ক্ষমতা প্রবাহ বহাল থাকবে। এজন্য রাজনৈতিক সংস্কারে সংশোধন করা, কঠোর প্রচারণা আইন প্রণয়ন এবং করপোরেট অনুদান নিষিদ্ধকরণ জরুরি।

বাংলাদেশের রাজনীতি যদি আর্থিক স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে চায়, তবে রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, যাতে দুর্নীতির চক্র ভাঙা যায়।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Total Post : 34