
রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খাবারের পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই মাসে খাদ্য গ্রহণের ধরন এবং সময়সূচি অনেকটাই বদলে যায়। দিনের দীর্ঘ সময় ধরে খাবার থেকে বিরত থাকার কারণে শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে। সুতরাং, রোজার সময় ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের সমস্যা
রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীরা ইফতার এবং সাহ্রি সময়ে অনেক খাবার গ্রহণ করেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু সাধারণ সমস্যা হল:
- ইফতারিতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, কখনও ১৫০০ কিলোক্যালরিরও বেশি।
- শর্করাজাতীয় খাবার যেমন, সেমাই, জিলাপি, পুডিং, সুশি ইত্যাদি অতিরিক্ত খাওয়া।
- ভাজাপোড়া খাবার, যেমন পাকোড়া, কাবাব, পরোটা ইত্যাদির আধিক্য।
- সাহ্রি বাদ দেওয়া বা অনেক আগে সাহ্রি খাওয়ার প্রবণতা।
- খাদ্য গ্রহণের সময় অনিয়মিততা এবং শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে ফেলা।
এই ধরনের অভ্যাস থেকে ডায়াবেটিক রোগীরা অনেক সময় অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করেন, যার ফলে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খাবারের পরামর্শ
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি, যাতে তারা সুস্থ থাকতে পারেন। নিচে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হল:
-
পানি গ্রহণের গুরুত্ব: ইফতারে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয় এবং হাইড্রেশন বজায় থাকে।
-
মিষ্টি খাবার পরিহার করুন: ইফতারে জিলাপি, চিনির শরবত, মিষ্টান্ন এবং ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।
-
ফলমুলের প্রতি যত্নশীলতা: অতিরিক্ত মিষ্টি ফল, যেমন পেঁপে, আম, কলা এড়িয়ে চলা ভালো। তবে শসা, খিরা, পেয়ারা, বরই, আমড়া ইত্যাদি কম শর্করা যুক্ত ফল খাওয়া যেতে পারে। ডাবের পানি এবং লেবুর পানি বিশেষভাবে উপকারী।
-
সাহ্রি বাদ দেওয়া যাবে না: সাহ্রি অবশ্যই খেতে হবে, কারণ এটি পুরো দিনের জন্য শক্তি প্রদান করে। সাহ্রিতে পুষ্টিকর খাবার, যেমন শর্করা, আমিষ ও চর্বি যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।
-
সাহ্রি দেরিতে খাওয়া: সাহ্রি যতটা সম্ভব দেরিতে খাওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে সারাদিন শরীর যথেষ্ট শক্তি পায়।
-
ফাইবারযুক্ত খাবার: আঁশযুক্ত খাবার যেমন, সবজি, ফল, ওটস ইত্যাদি গ্রহণ করলে কোষ্টকাঠিন্য দূর হতে পারে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভূতি কমে।
-
কফি ও চায়ের পরিমাণ কমান: চা, কফি বা কোলাপান করলে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে, তাই এগুলির পরিমাণ কমানো উচিত।
খাদ্যতালিকায় সুষমতা
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সুষম খাদ্যতালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোজায় খাবারের গঠন হতে হবে এমনভাবে:
- শর্করা: ৪০-৫০%
- আমিষ: ২০-৩০%
- চর্বি: ৩০-৩৫% (যার মধ্যে ১০% এর নিচে সম্পৃক্ত চর্বি থাকা উচিত)
এই উপাদানগুলোর সঠিক পরিমাণে গ্রহণে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে এবং রোজায় শরীর সুস্থ থাকবে।
উপসংহার
রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খাদ্য পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং রোজা পালনের সময় শরীরের সুস্থতা বজায় রাখা যায়। তাই সঠিক সময় এবং পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং অবহেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।