
বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের পূর্বঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তবে, সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সমাবেশ থেকেই গণমিছিল স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পরে শহীদ মিনারের পাদদেশে সমাবেশ শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শেষ হয়। এতে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রথমে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর ঘুরে টিএসসিতে সমাবেশের জন্য গণমিছিলটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এ কর্মসূচি আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ (বিসিএল), বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক সংসদ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
গণমিছিল স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা সমাবেশে বলেন, ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠী আমাদের আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেবে না প্রগতিশীল ছাত্র-যুব সমাজ।’
সমাবেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন বলেন, মাগুরায় শিশুটির মৃত্যুতে পুরো দেশ শোকাহত। কিন্তু ওই শিশুর মতো ঘটনা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে। বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চাওয়ার জন্য কিশোরীর বাবা নিহত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের বিচার না করা হলেও, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তিনি আরও বলেন, অভ্যুত্থানের মনোভাব থেকে সরকার ক্রমাগত বিচ্যুত হচ্ছে এবং নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়, যথা: ১. সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে। ২. ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে। ৩. জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ৪. মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে। ৫. চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ ও যৌথ বাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে। ৬. সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়া ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ৭. হিন্দু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।
এছাড়া, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ই, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল, যুব ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ এ সমাবেশে বক্তৃতা দেন।
এদিকে, দুপুর ১১টায় ‘প্রতিবাদী জুলাই জমায়েত’ কর্মসূচি হিসেবে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সভা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে, তাঁরা শহীদ মিনার দিকে একটি মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু পুলিশ বাধা দেয়। তারপর, পুলিশের অনুরোধে মিছিলটি ফিরে গিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে কর্মসূচি স্থগিত করেন।